অমিতাভ ও রেখা : এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি!

অমিতাভ ও রেখা : এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি!

বলিউড কিংবা ভারতীয় চলচ্চিত্র পাড়ায় বাস্তব জীবনের প্রেম কাহিনি বিরল কিছু নয়। সিনেমার গল্পে প্রেমের অভিনয় করতে করতে, অনেক নায়ক নায়িকাই বাস্তব জীবনে একে অপরের প্রেমে পড়েছেন। অনেকে বিয়ে করে, সংসার পেতে সেই প্রেমকে পূর্ণতাও দিয়েছেন। তবে আমাদের আজকের গল্প এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি নিয়ে! অমিতাভ ও রেখা, এক সময়ের বলিউডের জনপ্রিয় জুটি, একসঙ্গে করেছেন দশেরও অধিক সিনেমা! ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আমরা জানব— অমিতাভ ও রেখা’র অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি সম্পর্কে বিস্তারিত! চলুন শুরু করা যাক।

অমিতাভ ও রেখা : এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি

রাতের আকাশের মতন গভীর কালো এক জোড়া চোখ, পিঠ পর্যন্ত ঘন কালো চুল আর মোহনীয় ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। বলছি বলিউডের ডিভা রেখার কথা। রেখা এমনই একজন, এত বছর পরও যিনি ধরে রেখেছেন তার রূপের জাদু! আজও আট থেকে আশি সবার হৃদকম্পন বাড়িয়ে দিতে পারেন শুধুমাত্র চোখের চাহনিতেই। তার গভীর কালো চোখ, যে চোখ বলে দিতে পারে সব কথা। ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা রেখার পুরো নাম হয়ত অনেকেই জানেন না। তিনি রেখা নামেই সর্বাধিক পরিচিত হলেও, তার পুরো নাম ভানুরেখা গণেশন। ভারতের চেন্নাই থেকে উঠে আসা এই অভিনেত্রী প্রথম নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭০ সালে ‘শাওন ভাদো’ নামক সিনেমার মাধ্যমে। এই অভিনেত্রীর মা পুষ্পাভ্যাল্লীও চলচ্চিত্র জগতের সাথে জড়িত ছিলেন, তিনি ছিলেন একজন তেলেগু অভিনেত্রী। বাবা জেমিনি গণেশন ছিলেন তামিল অভিনেতা।

⏩ আরও পড়ুন: পছন্দের সিনেমা দেখার জন্য সেরা কয়েকটি ওয়েবসাইট!

অপরদিকে কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ১৯৪২ সালের ১০ অক্টোবর ভারতের এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ছয়ফুট উচ্চতার সুদর্শন এই নায়কের প্রেমেও কম মেয়ে হাবুডুবু খাননি। অভিনয়ের জোরে তিনি হয়েছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। সত্তর ও আশির দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। তবে তার অভিনয় জগতে আসার শুরুর দিকে প্রথম বারোটি ছবিই হয়েছিল ফ্লপ। সিনেমার নেশায় মুম্বাইতে এলে পরিচয় হয় বাঙালি ললনা জয়া ভাদুরীর সঙ্গে। এখানেই বান্দ্রার ‘গাজিবো’ রেস্টুরেন্টে তারা দুজনে বসে চুটিয়ে প্রেম করতেন শোনা যায়। এরকমই একটি সুন্দর প্রেমময় দিনে ১৯৭৩ সালে তারা দুজন ঠিক করেন তারা বিয়ে করবেন। একই সালে তারা আবদ্ধ হন বিবাহ বন্ধনে। তবে জানা যায় এই বাঙালি ললনার অমিতাভের আগেও প্রেম ছিল ভাষ্কর চৌধুরী নামক একজনের সঙ্গে। মুম্বাই আসার পর জয়া দেখা পান তার প্রেমিক পুরুষ অমিতাভ বচ্চনের। এরপর কলকাতায় এসে অমিতাভ ভাষ্করের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন আর কখনো জয়ার সঙ্গে যোগাযোগ না করার ব্যাপারে। সেই দুঃখেই কি না কে জানে, ভাষ্কর চৌধুরী তার কিছুদিন পরেই আত্মহ’ত্যা করেন।

১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ নামক সিনেমায় প্রথমবারের মতন জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। পর্দায় তাদের রসায়ন দেখে বিমোহিত হন দর্শকেরা। এদিকে সেলুলয়েড পর্দায় যেমন তাদের রসায়ন চলছে, তেমনই পর্দার আড়ালেও তাদের মধ্যে ঘটেছিল প্রণয়। এই সিনেমার সেটেই প্রথম একসাথে কাজ করতে গিয়েই বিবাহিত অমিতাভ এই অত্যন্ত আবেদনময়ী নায়িকার প্রেমে পড়ে যান। পর্দার পাশাপাশি পর্দার বাইরেও চলতে থাকে তাদের তুমুল প্রেম। দর্শকদের কাছেও জুটি হিসেবে তারা অনবদ্য। একের পর এক পরিচালক তাদের কাস্টিং করে সিনেমা বানাচ্ছেন আর অন্যদিকে তাদের প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। তাদের প্রেম নিয়ে নানারকম মুখোরোচক গল্প তখন দেদারসে বিকোচ্ছে। শোনা যাচ্ছে প্রায়ই নাকি শুটিং সেট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছেন এই দুই তারকা। ততদিনে অমিতাভের সংসারেও দেখা যাচ্ছে কালো মেঘের ঘনঘটা। সবার দৃষ্টি ও স্ত্রী জয়ার খবরদারি থেকে বাঁচতে লন্ডনে গিয়ে প্রেম করতেন তারা দুজন। শোনা যায় তারা গোপনে বিয়েও করেছিলেন।

পাঁচ দশকের ক্যারিয়ার জীবনে অমিতাভ অভিনয় করেছেন ১৯১টি সিনেমাতে। এর মধ্যে রেখার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ১১টি সিনেমায়, যার প্রায় সবগুলোই ছিল ব্যবসাসফল। ১৯৮১ সালে শেষবারের মতন অমিতাভ ও রেখাকে একসাথে সেলুলয়েড পর্দায় দেখা যায় ‘সিলসিলা’ সিনেমায়। এরপর তারা দুজন আর একসাথে কোনো সিনেমায় অভিনয় করেননি। এই সিনেমায় অভিনয় করেন জয়া ভাদুরী নিজেও। যদিও তাকে কাস্টিং করতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় বলেই জানা যায়। কারণ এই সিনেমাটি অমিতাভ, জয়া ও রেখার ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি নিয়েই তৈরি করা। যেন তাদের জীবন্ত কাহিনিই ধরা পড়েছে পর্দায়, সিনেমাতেও অমিতাভের স্ত্রী জয়া ও প্রেমিকা রেখা। তাদের প্রেম নিয়ে তখন সারাদেশে তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড়।

⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি হরর সিনেমা!

বলিউড চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অনেক নায়ক নায়িকার স্ক্যান্ডালই সামনে এসেছে, তবে অমিতাভ রেখার মতন এতটা ঝড় আর কোনো তারকার ব্যক্তিজীবন নিয়ে হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই মুক্তির পর তাদের ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে এবং স্বয়ং তাদেরই অভিনীত ‘সিলসিলা’ সিনেমাটি তুমুল ব্যবসাসফল হয়। বাণিজ্যিক ধারায় ২০০৮ এর আগ অব্ধি এর রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। সিনেমাটি মুক্তির পর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেল সবাই, মুনাফায় হাত ভরে গেল, অমিতাভও নিজের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে রেখার থেকে দূরে সরে গেলেন, একমাত্র রেখারই দুর্নাম হলো এরপর। তাকে ম্যান ইটার, সে’ক্সকিটেন সহ নানা নামে ডাকতে শুরু করল সবাই। ওদিকে অমিতাভ বচ্চন নিজের সংসার বাঁচাতে ও জয়ার দেওয়া কথা রাখতে এরপর আর কখনোই রেখার সঙ্গে কুশল বিনিময় অব্ধি করেননি। অথচ এরপর অমিতাভকে আক্ষায়িত করা হলো বিগ বি নামে, আর রেখা একাই হলেন ডাইনি। রেখা বলিউডে হয়েছিলেন বিতর্কিত, সমালোচিত। তবে রেখা এসব কিছুকে পাশ কাটিয়ে জ্বলে উঠেছিলেন আপন প্রতিভায়।

কুলি সিনেমার সেটে মারাত্মকভাবে আহত অমিতাভ প্রায় মৃ’ত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাকে ভর্তি করা হয় মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে। সেখানে জয়ার অনুমতি ছাড়া কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। সেইবার অমিতাভ কোনোভাবে মৃ’ত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসেন জয়ার সেবা যত্নে। তবে এরপর জয়ার কঠিন নিষেধের কারণে ছবি তো দূর, কুশল বিনিময়ও করেননি দীর্ঘ ৩৩ বছর রেখার সঙ্গে। অমিতাভের মা তেজী বচ্চনও ছিলেন এক্ষেত্রে অনঢ়। তিনি কিছুতেই রেখার সঙ্গে অমিতাভের বিয়ে মেনে নেবেন না জানিয়েছিলেন। ফলে রেখার সঙ্গে আজীবনের মতন বন্ধন ছিন্ন করেন অমিতাভ। এরপর দীর্ঘ ৩৩ বছর তাদের কথা বলতেও দেখা যায়নি!

২০১৬ সালে দীর্ঘদিন পর মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত স্ক্রিন পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে একসাথে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায় এই দুজনকে। অনুষ্ঠানে সেদিন অমিতাভ তার স্ত্রী জয়াকে নিয়ে যেমন এসেছিলেন, তেমনই রেখাও এসেছিলেন। রেখার আসনের পাশে এসে মিষ্টি হেসে নমস্কার জানিয়েছিলেন অমিতাভ। রেখাও তা গ্রহণ করেন সানন্দেই। রেখা ও জয়ার করমর্দনের ছবিটি সে সময় আবারও নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছিল সবার মনে।

⏩ আরও পড়ুন: জনপ্রিয় তারকাদের রহস্যজনক মৃত্যু!

আসলে রেখা ও অমিতাভের সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল, কেন তাদের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায়নি, তারা কি আসলেই বিয়ে করেছিলেন গোপনে? ত্রিভুজ এই প্রেমের ভেতরের রহস্যগুলো শুধুমাত্র জয়া, রেখা ও অমিতাভ এই তিনজন ব্যতীত আর কারও পক্ষে পুরোপুরি বোঝা বা জানা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে তারা পুরোপুরি মুখে কুলুপ এঁটে রাখলেও, পাঁচ যুগ পার হওয়ার পর আজও রেখা ও অমিতাভের সম্পর্ক নিয়ে মানুষের কৌতুহল ও আগ্রহের কমতি নেই।

**********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— অমিতাভ ও রেখা’র অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “অমিতাভ ও রেখা : এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top